নরসিংদী জেলাধীন শিবপুর উপজেলা ১টি পৌরসভা এবং দুলালপুর, সাধারচর, পুটিয়া, মাছিমপুর, চক্রধা, জয়নগর, যোশর, বাঘাব ও আয়ুবপুর এ ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। উপজেলার ভূ-প্রকৃতি ও ভৌগলিক অবস্থান এই উপজেলার মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতি গঠনে ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলায় অবস্থিত এই উপজেলাকে ঘিরে রয়েছে দক্ষিণে রায়পুরা, নরসিংদী সদর ও পলাশ উপজেলা, পূর্বে বেলাব ও রায়পুরা উপজেলা, উত্তরে মনোহরদী উপজেলা এবং পশ্চিমে পলাশ ও গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলাসমূহ। এখানে ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের অন্যান্য উপজেলার মতই, তবুও কিছুটা বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যায়। শিবপুর উপজেলার আঞ্চলিক ভাষার সাথে গাজীপুর ও ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষার অনেকটা মিল খুজেঁ পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন শীতলক্ষা, আড়িয়াল খা, পাহাড়িয়া ও ব্রহ্মপুত্র নদীর তীর বিধৌত প্রাচীন সভ্যতা ও ঐতিহ্য লালিত এবং বাঘাব, জয়নগর ও যোশর ইউনিয়নের লালমাটির উচু নিচু, সমতল, ছোট বড় টিলা, টেক ও পাহাড়ের নয়নাভিরাম অরণ্য আবরণে আবৃতে গড়া শিবপুর উপজেলার মানুষের খাদ্যাভাস, আচার-আচরণ ভাষা ও সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এ এলাকায় খড়গ রাজাদের শাসন আমল ছিল ৬০০-৭০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। খড়গ রাজাদের ৫ জন রাজা ছিলেন। তাদের নাম: (১) রাজা খড়োগাদ্যাম, (২) মহারাজা জাতখড়গ, (৩) মহারাজা দেব খড়গ, (৪) রাজা রাজভ্রট্ট ও (৫) রাজা বলভ্রট্ট। এ বংশের প্রথম তিন রাজা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং পরবর্তী দুই রাজা ছিলেন শৈব হিন্দু। পূর্বে এলাকাটি হিন্দু দেবতা শিব পুজার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এই এলাকার ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় শিবপুর উপজেলার সভ্যতা বহুপ্রাচীনন ও ঐতিহ্যবাহী। এই এলাকায় প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রাচীন সভ্যতার বাহক হিসেবে প্রমাপক।
সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে শিবপুর উপজেলার অবদানও অনস্বীকার্য।উপজেলার‘জয়মঙ্গল’ নামে পাহাড়ী গ্রামে আবিস্কৃত হয়েছে গুপ্তযুগের স্বর্ণমুদ্রা।আশ্রাফপুরে আবিস্কৃত হয়েছে সপ্তম শতাব্দীর মহারাজাদেব খড়গের তাম্রলিপি এবং অষ্টধাতুর নির্মিত বৌদ্ধ নিবেদন স্ত্তপ।এই আশ্রাফপুরেই আবিস্কৃত হয়েছে গৌড়ের স্বাধীন নরপতি আলাউদ্দিন হোসেন শাহেরপুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন নসরৎ শাহের রাজত্বকালে নির্মিত একটি অতিপ্রাচীন মসজিদ।
শিবপুরের কুমরাদী গ্রামে লালমাটি এবং প্রাচীন পুরাকীর্তির নমুনা বাংলার সুলতানি আমলের স্থাপত্য শৈলীর এক উজ্জ্বল নিদর্শন। প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নদী হাড়িধোয়ার পশ্চিম তীরে অবস্থিত কুমারটেকের মাটির প্রায় ১০/১২ হাত নিচ থেকে প্রাচীন মৃৎপাত্র, ভগ্নটুকরা এবং মাটির তৈরি ছোট ছোট গোলা। কথিত আছে যে, এগুলো খ্রিষ্টপূর্ব হাজার হাজার অব্দের সময়কালের মৃৎপাত্র এবং শিকারীদের ব্যবহার উপযোগি গোলা।
মহান মুক্তিযুদ্ধেও গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টিতেও নরসিংদীর ঐতিহ্য রয়েছে। যাঁর বুকের তাজা রক্ত মুক্তি পাগল জনতার মিছিলকে বেগবান করে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকে এগিয়ে নিয়েছিল সেই ৬৯ এর গণ আন্দোলনের শহীদ ‘আসাদ’ জন্মেছিলেন উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ধানুয়া গ্রামের এক সম্ভান্ত পরিবারে। বারার মৌলভী আবু তাহের। মাতা মতিজান খাদিজা খাতুন।
লটকন, কাঁকরোল, কাঁঠাল, শশা, সিম, বেগুন, জিঙ্গা, ধান, লাউ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য শিবপুর বাংলাদেশের একটি অন্যতম কৃষি সমৃদ্ধ উপজেলা হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। শিবপুর উপজেলা থেকে লেবু ও বিভিন্ন সবজি বিদেশে সুনামের সহিত রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হচ্ছে। সেই সাথে পোল্ট্রি ও বেত শিল্পেও শিবপুরের সুনাম রয়েছে।
One-District-One Productহিসাবে শিবপুর উপজেলার জয়নগর, বাঘাব ও যোশর ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকার বিখ্যাত টক মিষ্টি স্বাদের ছোট গোলাকৃতির রসালো ফল লটকন। লটকন শিবপুর উপজেলার একটি অন্যতম বিখ্যাত অর্থকারী ফসল।
সংস্কৃতি বিষয়ক কর্মকান্ডে শিবপুর উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ১। অফিসার্স ক্লাব এন্ড কালচারাল সেন্টার, ২। পূরবী সংগীত নিকেতন, ৩। ত্রিধারা ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস